বস্তায় আদা চাষে বাণিজ্যিকভাবে স্বাবলম্বী বাহুবলের কৃষক নিজাম উদ্দিন
সংবাদ পরিবেশনে: মো.জুলফিকার আলী, এআইসিও, কৃষি তথ্য সার্ভিস, সিলেট
রান্নায় এক অনন্য মসলার নাম আদা। আদা ছাড়া রান্নার সঠিক স্বাদ বা ঘ্রাণ আসে না। আর সেই আদা বাণিজ্যিকভাবে বস্তা পদ্ধতিতে চাষ হচ্ছে হবিগঞ্জ জেলার বাহুবলের ছিলামী গ্রামসহ বিভিন্ন স্থানে।
প্রথমে ছিলামী গ্রামের বাসিন্দা কৃষক নিজাম উদ্দিন বাড়ির পাশে পুকুর পাড়ে কিছু পরিমাণ পরিত্যক্ত জমি আবাদ করেন। কী ধরনের ফসল চাষ করে লাভবান হওয়া যাবে, এ নিয়ে ভাবছিলেন।
মসলার উন্নত জাত ও প্রযুক্তি সম্প্রসারণ প্রকল্পের আওতায় বস্তায় আদা চাষ প্রদর্শনীর মাধ্যমে সিমেন্টের বস্তা সংগ্রহ করে কৃষক নিজাম উদ্দিন চাষ শুরু করেন। কিছুদিনের মধ্যে বস্তায় আদা গাছ আসে। আদার বাম্পার ফলনে কৃষক নিজাম উদ্দিনের মুখে হাসি ফুটেছে। তার আদা চাষের সফলতা দেখে উপজেলার বিভিন্ন এলাকার কৃষকরা বস্তায় আদা চাষ শুরু করেছেন। তারাও সফলতার মুখ দেখছেন।
কৃষক নিজাম উদ্দিন বলেন- চলতি মৌসুমে আমি প্রায় ৮০০ বস্তায় আদার আবাদ করেছি। বস্তা পদ্ধতিতে আদা চাষ সম্পূর্ণ ঝুঁকিমুক্ত। কারণ অতি বৃষ্টি, খড়াসহ যে কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগে এই আদার ক্ষতি করতে পারে না। প্রয়োজনে দ্রুত অন্যত্র সরিয়ে নেয়া যায়। আদা চাষে প্রায় ৮ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। এখন আদা বিক্রি থেকে লক্ষাধিক টাকা আয় করার আশা করছি। আগামীতে আরো ব্যাপকভাবে বস্তায় আদা চাষ করার প্রস্তুতি নিয়ে রাখছি।
বস্তায় আদা চাষে সার্বিকভাবে পরামর্শ দেন- শামিমুল হক শামীম, উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা, দ্বিমুড়া কৃষি ব্লক। তিনি জানান- এই পদ্ধতিতে একদিকে যেমন মাটিবাহীত রোগের আক্রমণ অনেক কম হয়, অন্যদিকে প্রাকৃতিক বিপর্যয় হলে বস্তা অন্য জায়গায় সরিয়েও নিয়ে যাওয়া সম্ভব। কৃষি খাতে আধুনিকতার প্রসার ঘটায় বর্তমান সময়ে বাড়ির উঠান কিংবা পতিত জমিতে বস্তায় আদা চাষে ঝুঁকছে কৃষকরা। অল্প খরচ আর অধিক লাভ হওয়ায় সাথী ফসল হিসেবে কৃষকদের মাঝে বস্তায় আদা চাষ জনপ্রিয় হয়ে ওঠেছে। তিনি বলেন, নিজাম উদ্দিন ছাড়াও অনেক কৃষককে পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। তারা পরামর্শ গ্রহণ করে আদা চাষে এগিয়ে এসেছেন।
কৃষিবিদ সাজ্জাদ হোসেন মজুমদার, উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা বলেন- বস্তায় আদা চাষে প্রথম দিকে মাটি, বালু, গোবরসার ও দানাদার কীটনাশক নিয়ে ভালোভাবে মিশিয়ে নিতে হয়। তবে আদার কন্দ লাগানোর আগে ছত্রাকনাশক পানিতে দিয়ে শোধন করে নিলে ভালো। শোধনের পর কন্দগুলো আধাঘণ্টা ছায়ায় রেখে শুকিয়ে নিতে হয়। পরে মাটিভর্তি বস্তায় তিন টুকরো অঙ্কুরিত আদা পুঁতে দিবে হবে। বাড়ির উঠান বা আশপাশের ফাঁকা জায়গা অথবা ছাদে যেখানে খুশি এসব বস্তা রাখা যায়। অনেকেই আবার সাথী ফসল হিসেবেও চাষ করে থাকেন। ২২ থেকে ২৫ দিন পর গাছ বের হবে। প্রতি বস্তায় আদা রোপণ থেকে পরিপক্ক হতে ৩০ থেকে ৪০ টাকার মতো খরচ হয়। অনেকে আবার আরো কম খরচে আদা চাষ করে থাকেন।
Planning and Implementation: Cabinet Division, A2I, BCC, DoICT and BASIS