(ক) পানির উপর প্রভাব:অন্যান্য গাছের তুলনায় প্রতিটি ইউক্যালিপটাস ও আকাশমনি গাছ খুব বেশি পরিমাণে পানি শোষণ করে থাকে। এর এক একটি পূর্ণবয়স্ক গাছ দিনে প্রায় ২০-২০০ লিটার পর্যন্ত পানি টেনে নেয় (আকাশমনি কিছু কম শোষণ করে)। সাধারণভাবে অন্যান্য পরিপূর্ণ ফলজ ও বনজ গাছ দৈনিক গড়ে ২০-৭০ লিটার পানি শোষণ করে থাকে। ফলস্বরূপ, ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যায় এবং আশেপাশের জমি শুকিয়ে যায়।
(খ) জৈববৈচিত্র্যের ক্ষতি:এই দুই প্রজাতির গাছ তাদের নিজের বংশবিস্তার রক্ষার জন্য এক ধরনের রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহার করে। এর মূল, পাতা ও ছাল থেকে নির্গত কিছু Phenolic Compound এবং Eucalyptol চারপাশের মাটিতে গিয়ে উদ্ভিদ বীজ অঙ্কুরোদগম রোধ করে— একে বলে allelopathy effect। তাই, এর পাতা ঝরে জমিতে পড়ে পচলেও নতুন ঘাস, ঝোপ বা অন্যান্য উদ্ভিদ সহজে জন্মাতে পারে না।
(গ) মাটির গুণাগুণ নষ্ট:ইউক্যালিপটাস ও আকাশমনি গাছের শুকনো পাতা, বাকল ও ডাল মাটিতে পড়ে পচে যায়। এই পাতা-পচা অংশে থাকে tannins, phenolic acids এবং volatile oils, যেগুলো অ্যাসিডিক প্রকৃতির হয়। যখন এগুলো মাটিতে মিশে যায়, তখন তারা মাটির pH কমিয়ে দেয় অর্থাৎ মাটি হয়ে পড়ে অ্যাসিডিক। আর অ্যাসিডিক মাটিতে অধিকাংশ ফসল ও উদ্ভিদ সঠিকভাবে বেড়ে উঠতে পারে না।আবার এদের বাকল ও পাতা থেকে নির্গত তেল ও রাসায়নিক যৌগ মাটিতে বসবাসকারী অনেক উপকারী ব্যাকটেরিয়া ও ফাঙ্গাসের জন্য বিষাক্ততার কাজ করে। যার ফলে জৈব পদার্থ ভাঙার গতি কমে যায়, এতে মাটির উর্বরতা শক্তি কমে যায় এবং সঠিক ভাবে ফসল উৎপাদনের জন্য জমি অনুপযুক্ত হয়ে পড়ে।
(ঘ) পাখি ও প্রাণীর বাসস্থান নষ্ট:এই গাছ দ্রুত বর্ধনশীল হলেও এটি এককভাবে বিস্তার লাভ করে এবং আশেপাশের অন্য গাছপালা জন্মাতে দেয় না, যার ফলে পাখি ও ছোট প্রাণীদের খাদ্য ও আশ্রয়ের উৎস কমে যায়। এছাড়াও ইউক্যালিপটাসের পাতা ও ছাল থেকে নির্গত তীব্র গন্ধযুক্ত রাসায়নিক পদার্থ পোকামাকড়কে দূরে রাখে, ফলে অনেক পাখির খাদ্যচক্র ভেঙে পড়ে। এছাড়া গাছের কাঠ শক্ত ও ডাল খাড়া হওয়ায় তাতে পাখিরা সহজে বাসা বানাতে পারে না। আগুনের ঝুঁকি থাকাও আরেকটি বড় সমস্যা, কারণ দাবানলে তাদের আশ্রয় একেবারে নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়। ফলে ধীরে ধীরে সেই অঞ্চলে পাখি ও প্রাণীর সংখ্যা কমে আসে, ফলে পরিবেশ হয়ে পড়ে একেবারে প্রাণহীন ও একঘেয়ে।